এখন যতই চারদিকে থিমের রমরমা থাক, শুরুটা এমন ছিল না। দুর্গাপুজোর যে আদি রূপ সেটা যেন আজ অনেকেই ভুলে গেছেন। দুর্গাপুজোর সঙ্গে কত শতকের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। এর নেপথ্যে কতই না লোক গাঁথা, পৌরাণিক গল্প আছে। কতজন জানেন সেটা? পুরাণ অনুযায়ী বসন্তকাল হচ্ছে দেবী দুর্গার পুজো করার আসল সময়। কিন্তু রাবণকে বধ করার জন্য রামচন্দ্র দেবীর অকালে আবাহন করেন তাঁর আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য। রাম যে দুর্গাকে পুজো করেছিলেন তাঁর দশটি হাত রয়েছে এবং তিনি মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। ফলে বরাবর আমরা যে উৎসবকে দুর্গোৎসব বলে জেনে আসছি সেটার আরেক নাম হল অকাল বোধন। দেবী দুর্গা অনেক প্রাচীন দেবী, এমনটাই মনে করা হয় প্রত্নতত্ত্বের ভিত্তিতে। আদতে দুর্গাপুজোর সূচনা যে কবে হয়েছিল সেটা এখনও নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি।
বাংলাদেশের ধনী বাড়িগুলোতে খুব সম্ভবত মোঘল আমল থেকেই দুর্গাপুজোর সূচনা ঘটেছিল।এই পুজোর শুরু কবে?১৫০০ শতকের প্রথম দিকে খুব সম্ভবত এই পুজোর সূচনা হয়েছিল। দিনাজপুর মালদার জমিদার প্রথম এই পুজো শুরু করেছিলেন বলে মনে করা হয়। তিনি দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজো শুরু করেছিলেন পারিবারিক ভাবে। তবে সেই দেবী দুর্গার রূপ অন্যরকম ছিল। লোকমুখে শোনা যায় এই বাড়ির দেবীর বাহন হচ্ছে সাদা বাঘ এবং সবুজ সিংহ। অন্যদিকে দেবীর চোখ হচ্ছে গোলাকার। তবে আরও একটি লোকগাঁথা অনুযায়ী বাংলার দুর্গাপুজোর সূচনা হয়েছিল তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণ কিংবা নদীয়ার ভবানন্দ মজুমদার হাত ধরে। কিন্তু বারোয়ারী দুর্গাপুজোর সূচনা কবে হয়েছিল?এই বারোয়ারী পুজোর একটি ইতিহাস আছে। বারোজন বন্ধু মিলে প্রথমবার এই পুজো শুরু করেছিলেন বলে এমন নাম। ১৭৯০ সালে ১২ জন মিলে একসঙ্গে একটি পুজো শুরু করেন গুপ্তিপাড়ায়। এই পুজোটাকে বলা হতো বারো পল পুজো। অন্যদিকে কলকাতায় প্রথম দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন কাশিমবাজারের রাজা হরিনাথ। কলকাতায় একাধিক জমিদার বাড়িতে ব্রিটিশ আমলেও দুর্গাপুজো পালন করা হতো। নবকৃষ্ণ দেবের বাড়িতে তখনকার দিনে দুর্গাপুজোয় যা খরচ করা হয়েছিল তাতে এই পুজো একটি গ্র্যান্ড ফিস্টে পরিণত হয়েছিল।
দুর্গাপূজা মানে বাঙালীর কাছে এক চিরন্তন আবেগ ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন। এই পুজোকে কেন্দ্র করে সব শ্রেণীর মানুষ আনন্দে মেতে ওঠেন এবং এরই মাধ্যমে সমাজের একটি দিক অর্থনৈতিকভাবেও অগ্রসর হতে পারে। তাই, দুর্গাপূজা মানেই শুধু হৈ হুল্লোড় নয়, অনেকের কাছে সারাবছরের আয়ের একটি উৎসও বটে। এই একটি পুজোর জন্যে বাঙালী বছরভর অপেক্ষা করে থাকে এবং আমরাও তার ব্যতিক্রম নই।
প্রবাদ আছে,
মা দুর্গা মর্ত্যে এসে প্রথমে জোড়াসাঁকোর শিবকৃষ্ণ দাঁ’র বাড়িতে গয়না পরে সাজেন,
কুমোরটুলির অভয়চরণ মিত্রের বাড়িতে ভোজন করেন ,
সবশেষে, শোভাবাজার রাজবাড়ীতে রাত জেগে নাচ-গান দেখেন।
.
জোড়াসাঁকো দাঁ বাড়ি : এই বাড়ির আদি কর্তা ছিলেন গোকুলচন্দ্র দাঁ,এনার পুত্র শিবকৃষ্ণ দাঁ’র হাত ধরেই ১৮৩৯ সালে জোড়াসাঁকোর বাড়িতে দুর্গাপূজার সূচনা হয়। দাঁ বাড়ি ছিল গন্ধবণিক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত এবং শিবকৃষ্ণ দাঁ’এর আমলে নানারকম ব্যবসা ছাড়াও তিনি আসানসোলের কোলিয়ারি কিনে সেখানে রেললাইন স্থাপনের বরাত পান। তাঁর বিপুল আয়ের একটি অংশ দিয়ে উনি দুর্গাপূজা শুরু করেন। শিবকৃষ্ণকে সেই কালে কুবেরের সাথে তুলনা করা হত, উনি নিজে কুলীন ব্রাহ্মণদের পাল্লা দিতে সোনার পৈতে পরতেন।
উনি নিজে সাজতে খুব ভালোবাসতেন তাই দেবী প্রতিমাকে সাজানোর জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করতেন।দেবী প্রতিমার শাড়ি বোনা হত সোনার ও রুপোর সুতো দিয়ে আর তাতে থাকত নানারকম মূল্যবান পাথর, এছাড়াও নানারকম দামী স্বর্ণালঙ্কারে দেবীর সর্বাঙ্গ ভূষিত থাকত। দেবীর চালচিত্রে থাকত তামা ও পিতল দিয়ে তৈরি একরকম ধাতুর পাতের নকশা আর এই সমস্তটাই আসত প্যারিস ও জার্মানী থেকে। দেবীর সাজসজ্জার এমন আড়ম্বর সেই সময় কলকাতা শহরে কেউ দেখেনি। কথিত আছে প্রতিবছর দেবী দূর্গার জন্য নতুন সাজ আসত সাগরপাড়ের ইউরোপীয় শহর থেকে আর একবছরের সাজ পরের বছরে পুনরাবৃত্তি হতনা তবে ১৯৪০ সালের পর থেকে সেই সাজই এখনো চলে আসছে।শিবকৃষ্ণ দাঁ’র পুজোর সাথে ঠাকুরবাড়ির প্রিন্স দ্বারকানাথের বাড়ির পুজোর খুব রেষারেষি ছিল, একবার দ্বারকানাথ শিবকৃষ্ণকে টেক্কা দেওয়ার জন্য নিজের বাড়ির প্রতিমা সোনার গয়না সমেত গঙ্গায় বিসর্জন করেছিলেন যার ফলে শহর কলকাতায় রীতিমতো সাড়া পড়ে গেছিল। দাঁ বাড়ির পুজো হয় বৈষ্ণব পদ্ধতিতে (যদিও এখানে সিংহ ঘোড়ার আকৃতির নয়) তাই এখানে কোনো বলিপ্রথা নেই। রথের দিন কাঠামো পুজোর মাধ্যমে দেবী পূজার সূচনা হয়।এই বাড়িতে প্রতিপদের দিন বোধন হয় এবং সেই থেকে পুজো শুরু হয়ে যায়। দাঁ বাড়িতে অন্নভোগের চল নেই, শুকনো চালের নৈবেদ্য ও লুচি, খাজা নানারকম মিষ্টি বাড়িতে প্রস্তুত করেই নিবেদন করা হয়। নবমীর দিন কুমারী পূজা ও সধবা পূজা হয় এছাড়াও ধুনো পোড়ানো এই বাড়ির একটি অন্যতম রীতি। অতীতে অনেক নাচগানের অনুষ্ঠান হলেও কালের নিয়মে সেই জৌলুস আজ অস্তমিত তবুও ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এই দাঁ বাড়ি।
অভয়চরণ মিত্র বাড়ি : এই বাড়ির আদি পুরুষ হলেন গোবিন্দরাম মিত্র। ১৬৯৭ সালে ইংরেজরা যখন পাকাপাকি ভাবে নিজেদের আধিপত্য স্থাপন করেন তখন ইনি ছিলেন ভারতীয় হিসেবে দ্বিতীয় ডেপুটি কালেক্টর। ঘোড়াগাড়ি চালানো প্রথম বাঙালী ব্যক্তিও ইনি। কুমোরটুলিতে ৫০বিঘা জমির উপর উনি এক সুন্দর প্রাসাদ নির্মাণ করেন । এই বাড়িরই উত্তর পুরুষ হলেন অভয়চরণ মিত্র। গোবিন্দরামের আমলে দুর্গাপূজা শুরু হলেও অভয়চরণের আমলে তার জৌলুস বৃদ্ধি পায়। উনি নিজেও ইংরেজদের আমলা পদে চাকরি করতেন। এই বাড়ির দুর্গা প্রতিমাকে নানারকম স্বর্ণালঙ্কার ছাড়াও স্বর্ণ ও রৌপ্য পত্রে মোড়া হত। এছাড়াও দেবীর ভোগে থাকত তিরিশ থেকে পঞ্চাশ মণ চালের নৈবেদ্য, এছাড়াও নানারকম মিষ্টি, গজা, নিমকি, লুচি, রাধাবল্লভী ইত্যাদি দেবীকে নিবেদন করা হত। এখনও এই রীতি অব্যাহত আছে।এই বাড়িতেও দেবীকে অন্নভোগ দেওয়া হয়না। এখানে কুমারী পুজোর চল আছে এবং পশুবলি নিষিদ্ধ। এই পরিবারের আদি পুরুষের বানানো ঘাট যেটি বর্তমানে বাগবাজার ঘাট নামে পরিচিত, সেখানে সাড়ম্বরে প্রতিমা নিরঞ্জিত হয়।
শোভাবাজার রাজবাড়ী : এই বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নবকৃষ্ণ দেব। অল্পবয়সে পিতৃহারা হওয়ার পর তার মায়ের চেষ্টায় তিনি আরবি ও ফার্সি ভাষা শেখেন ও পরে ইংরেজি ভাষাও রপ্ত করেন। তিনি ছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস–এর ফার্সি শিক্ষক। এছাড়াও ইংরেজদের আরবি ও ফার্সি ভাষার দলিল–দস্তাবেজ পড়া ও নানা বিষয়ে পরামর্শদাতা হিসেবে তিনি নিযুক্ত ছিলেন। ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের সময় গভর্নর ছিলেন রবার্ট ক্লাইভ, তিনি ছিলেন নবকৃষ্ণের বিশেষ বন্ধু।পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের জন্য ইংরেজদের পরামর্শদাতা হিসেবে নবকৃষ্ণের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য, ফলপ্রসূত জয়লাভের পর তিনি পেয়েছিলেন বিপুল উপঢৌকন, রাজবাহাদুর খেতাব, এছাড়াও বর্তমান বাড়িটি, যা ছিল তৎকালীন ধনী ব্যক্তি শোভারাম বসাকের। বাড়িটি উপঢৌকন হিসেবে পেলেও তিনি বাড়িটির প্রভূত সংস্করণ করেছিলেন দিল্লির দেওয়ান–ই–আম ও দেওয়ান–ই–খাস–এর আদলে। অবশেষে বিজয়োৎসব হিসেবে সূচনা হল কোলকাতার অন্যতম প্রাচীন দুর্গাপূজার যার নেপথ্যে ছিলেন স্বয়ং লর্ড ক্লাইভ। এই বাড়ির প্রতিমার একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। নবকৃষ্ণ ছিলেন ডাকের সাজের সূচনাকার, জার্মানি থেকে ডাক–এ করে প্রতিমার সাজ আসত বলে লোকের মুখে মুখে নাম হয়ে গেল ডাকের সাজ যার নব সংস্করণ হল সোলার সাজ। সেইসময় এইবাড়িতে পুজোর সময় নাচগানের আসর ছিল অন্যতম। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নামী বাঈজিদের আনা হত। বাঈজি নাচের সাথে সাথে বল ড্যান্স, খেউর, তর্জার আসর এবং যাত্রার আসরও সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হত। এই বাড়িতে উল্টোরথের দিন কাঠামো পুজোর মাধ্যমে দেবীপূজার সূচনা হয় এবং চিরাচরিত রীতি মেনে এখনও বাড়িতেই নির্ধারিত প্রতিমা–শিল্পী দ্বারা প্রতিমা নির্মিত হয়। কৃষ্ণনবমীর দিন বাড়িতে বোধনের সূচনা হয় ও প্রতিপদের দিন থেকে প্রতিদিন চন্ডীপাঠ হয়। রাজবাড়িতে কোনো অন্নভোগের চল নেই। পুজোর সময় থেকে এই বাড়িতে চিরাচরিত ভাবে ভিয়েন বসে এবং নানা রকম ভাজা মিষ্টি, শুকনো মিষ্টি, নিমকি, কচুরি ইত্যাদি প্রস্তুত করে দেবীকে নিবেদন করা হয়।পূর্বে সন্ধিপূজোর সময় কামানে গোলাবর্ষন করে শুরু হলেও এখন শুধুমাত্র বন্দুকের ফাঁকা আওয়াজ করা হয়। আগে সপ্তমী–অষ্টমী–নবমীতে পশুবলিপ্রথা থাকলেও বর্তমানে তা বিলুপ্ত, এখন শুধুমাত্র তিনদিন আখ, চালকুমড়ো ও মাগুরমাছ বলি দেওয়া হয়।দশমীর দিন অপরাজিতা পূজা ও দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হয় দেবী পূজা। পূর্বে ভাসানের সময় নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর চল থাকলেও এখন শুধুমাত্র মাটির নীলকণ্ঠ পাখি গড়ে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।বর্তমানে পুজোটি নবকৃষ্ণের দত্তক পুত্র ও নিজ পুত্রের দুটি শাখায় বিভক্ত।
ঠনঠনিয়া দত্ত বাড়ি : এই বাড়ির প্রাণপুরুষ ছিলেন দ্বারিকানাথ দত্ত। এই দত্ত বাড়ি সুবর্ণবণিক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। দ্বারিকানাথ মূলতঃ বিদেশী বস্ত্র আমদানি করে সেইগুলো বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। এছাড়াও নুন, পাট ইত্যাদি ব্যবসা করে প্রভূত ধনসম্পদের অধিকারী হয়ে ওঠেন। তিনি ১৮৫৫ সালে কলেজস্ট্রীট সংলগ্ন ঠনঠনিয়া অঞ্চলের বাড়িতে দুর্গাপূজার সূচনা করেন। কথিত আছে উনি যাকে বিয়ে করেন তার গায়ের রং ছিল কালো এবং তিনি আসার পরেই দ্বারিকানাথের ব্যবসার উন্নতি শিখরে পৌঁছায়, সেই থেকে রীতি অনুযায়ী এখনও অবধি বাড়ির মহিলাদের নামে পুজোর সংকল্প করা হয়। এই বাড়ির প্রতিমা মহিষাসুরমর্দিনী হিসেবে নয় শিব–দূর্গা রূপে পূজিত হন। দেবী এখানে মহাদেবের কোলের উপর আসীন এবং দেবী দ্বিভুজা।এখানে রাখীপূর্ণিমার দিন কাঠামোপুজোর মাধ্যমে দেবী পূজার সূচনা হয় এবং জন্মাষ্টমীর দিন ঠাকুরদালানে প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয়। এই বাড়িতে প্রতিপদের দিন দেবীঘট স্থাপিত হয় এবং আলাদা বোধনঘরে দেবীর বোধন হয়। এই বাড়ির পুজো হয় সম্পূর্ণ বৈষ্ণব পদ্ধতিতে এবং এই বাড়িতে কোনো বলিপ্রথার চল নেই। দেবীর ভোগে কোনরকম অন্নভোগ দেওয়া হয়না, তার পরিবর্তে নানারকম মিষ্টি, শুকনো খাবার, নোনতা খাবার, মুড়কি এবং বিশেষত্ব হিসেবে ২৭টি নারকেল দিয়ে তৈরি নাড়ু ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়। এছাড়াও ১৬মণ চালের নৈবেদ্য দেবীকে ভোগ অর্পণ করা হয়।এই বাড়ির সধবা মহিলাদের পুজোর প্রতিদিন সোনার নথ ও পায়ে মোটা রূপোর মল পরা বাধ্যতামূলক। ধুনো পোড়ানো এই বাড়ির একটি অন্যতম রীতি এবং নবমীর দিন কুমারী ও সধবা পূজা হয়। পূর্বে চারদিন ধরে যাত্রার আসর ও নাচগানের আসর বসত এবং মহিলাদের জন্য দোতলার বারান্দায় চিকের আড়ালে থেকে দেখার বন্দোবস্ত ছিল।বর্তমানে এই পুজোর জৌলুসও অন্য পুজোর মত অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে।
মল্লিকবাড়ির সিংহবাহিনী : এই বাড়ির প্রতিমা মূলতঃ অতি প্রাচীন এক প্রতিমা। বানভট্টের হর্ষচরিত থেকে জানা যায় এই প্রতিমা গুপ্তসাম্রাজ্যের রাজা হর্ষবর্ধনের দাদা রাজ্যবর্ধনের কুলদেবী ছিলেন। পরবর্তীকালে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর বিভিন্ন প্রাদেশিক শাসনের রাজত্বকালে দেবী চলে যান জয়পুরের রাজা মানসিংহের কাছে এবং সেখানে কুলদেবী হিসেবে পূজিত হতে থাকেন। কিন্তু মুঘল আক্রমণের কারণে দেবীকে রক্ষা করতে রাজপুরোহিত বিগ্রহ নিয়ে পালিয়ে গেলেন এবং পূর্ববঙ্গের চট্টগ্রাম জেলার এক পাহাড়ের মধ্যে দেবীকে লুকিয়ে রাখলেন। কালক্রমে মল্লিক বাড়ির পূর্বপুরুষ বৈদ্যনাথ মল্লিক ব্যবসার কাজে চট্টগ্রাম গেলে সেখানে দেবীর স্বপ্নাদেশ পান এবং বহু পরীক্ষার পর সেই পাহাড়ের গুহা থেকে দেবীকে উদ্ধার করে আদি বাড়ি হুগলী জেলার সপ্তগ্রামে নিজের বাসভূমিতে নিয়ে আসেন।আনুমানিক ১৬১৪ সালে নিজের ভদ্রাসনে তিনি দূর্গাপূজার সূচনা করেন।পরবর্তীকালে তার বংশধররা পাকাপাকিভাবে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন এবং দেবীকে নিয়ে এসে কলকাতায় পুজো শুরু করেন। মল্লিক পরিবার সুবর্ণবণিক সম্প্রদায়ের অন্তর্গত এবং বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষিত কিন্তু তাদের পুজোর রীতি পুরোপুরি শাক্ত মতেই পালিত হয়। দেবী এখানে সিংহবাহিনী ও চতুর্ভূজা এবং অষ্টধাতুর দ্বারা নির্মিত।বিগ্রহের সর্বাঙ্গ নানারকম স্বর্ণালঙ্কারে ভূষিত থাকে।দেবী বিগ্রহের সাথে এখানে দুটি শিবলিঙ্গ একই সাথে পূজিত হতে থাকেন।মল্লিক পরিবারে কৃষ্ণানবমীর দিন থেকে সংকল্প শুরু হয় ও ১৫দিন ধরে পুজো অনুষ্ঠিত হতে থাকে। এই পরিবারে প্রাচীন রীতি মেনে এখনও পাঁঠাবলি হয়ে থাকে, পূর্বে কোনো এক বৈষ্ণব পরিবার বলিপ্রথার বিরোধিতা করে সেটা বন্ধ করে দিলে সেই পরিবার বিশাল বিপদের সম্মুখীন হয় সেই থেকে পুরোনো রীতি অব্যাহত আছে।কলকাতায় মল্লিক পরিবার বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত এবং প্রতি বছর পালা করে এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও পুরোনো কলকাতার আনাচে কানাচে সহ পশ্চিমবঙ্গের অনেক জেলায় বনেদি পরিবারের পুজোর ইতিহাস লুকিয়ে আছে। কালের নিয়মে সব বাড়িতেই জৌলুস কিছুটা কমে গেলেও এখনো সাড়ম্বরে বনেদিয়ানার আভিজাত্যের সাথে অনুষ্ঠিত হয়।
তথ্যসূত্র: কলিকাতার দুর্গকথা: শুভাশীষ মুখার্জী
অরবিন্দনগর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির ৩৫ বছরের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আমরা ১৯৮৮ সালে আমাদের যাত্রা শুরু করেছিলাম এবং এই বছর দুর্গাপূজা ৩৬ তম বছর। যত দিন যাচ্ছে আমরা বড় মাপের দুর্গাপুজোর আয়োজন করে ধীরে ধীরে সমাজের একটি ভালো ও দায়িত্বশীল ক্লাবে পরিণত হয়েছি। আমরা দুর্গাপূজা ও জগদ্ধাত্রী পুজোর পাশাপাশি রাখিবন্ধন উৎসব, স্বাধীনতা দিবস , অনেক স্বনামধন্য স্বাধীনতা সংগ্রামী, কবি, লেখকের জন্মদিন উদযাপন, অভাবগ্রস্তদের পশমী বস্ত্র বিতরণের আয়োজন করেছি।প্রতিবছর আমরা পাড়ার অধিবাসীরা মিলে শীতকালীন বনভোজনের আয়োজন করি। ধীরে ধীরে আমরা রক্তদান, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বিনামূল্যে চক্ষু পরীক্ষা শিবিরও শুরু করি। আমাদের এই সমাজসচেতনতামূলক কাজ মেদিনীপুরের বিভিন্ন সংবাদপত্র তথা মেদিনীপুর টাইমস, ছাপাখবর, উপত্যকা, বিপ্লবী সব্যসাচী পত্রিকা প্রকাশ পেয়েছে। আন্তর্জাতিক পত্রিকার পাতার শিরোনামে বার বার উঠে এসেছে অরবিন্দনগর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির প্যান্ডেল ও প্রতিমার ছবি। ১৯৮৮ সালে, মেদিনীপুর অরবিন্দনগরের বাসিন্দারা একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার তাগিদ অনুভব করেছিলেন। আমাদের সংস্কৃতি, জীবনযাত্রার অবস্থা এবং সহ নাগরিকদের নৈতিকতাকে উজ্জীবিত করার একটি দীর্ঘ উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে ক্লাবটি সম্মাননা ব্যক্তিদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে, সদস্যদের শক্তি অনেকগুণ বেড়েছে কারণ আরও এবং আরও বেশি তরুণ উৎসাহ আমাদের ক্লাবে যোগদান করতে বেছে নিয়েছে এবং যে কারণে আমরা আমাদের ইতিহাসের ইতিহাসে সমৃদ্ধ হয়েছি তাতে অবদান রাখছি।
আশ্বিন মাসে প্রায় দশ দিন ধরে দুর্গা পুজোর উৎসব পালিত হয়। যদিও প্রকৃত অর্থে, উৎসব শুরু হয় ষষ্ঠীর দিন থেকে। দুর্গাপুজোর পাঁচ দিন মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, …
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, মহাষষ্ঠীর দিন দেবী দুর্গা তাঁর সন্তান- সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশ এবং কার্তিককে নিয়ে মর্তে অবতরণ করেন। মহাষষ্ঠীর প্রাক্কালে দুর্গা…
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আজ মহাসপ্তমী। ধূপ-ধুনো, বেল-তুলসি আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, পুষ্পমাল্য, চন্দনসহ ১৬টি উপাচার দিয়ে দেবী দুর্গাকে পূজা করা হবে।
বিশ্বাস করা হয় যে দেবী দুর্গা মহাঅষ্টমীতে মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। এই দিন ভক্তেরা পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে দেবীকে আরাধানা করেন। দেখা নিন এই বছরের অষ্টমীর …
সপ্তমী থেকে বাঙালির অঞ্জলি দেওয়া শুরু। অষ্টমী দিনটি তো খুবই বিশিষ্ট। গোটা পুজোয় বাঙালি আর কিছু করুক বা না-করুক, অষ্টমীর অঞ্জলি দেবেই। কিন্তু এত কিছুর পরেও সন্ধিপুজোর মাহাত্ম্য একেবারেই আলাদা।
অকাল বোধন করে দেবী দুর্গার আশীর্বাদ নিয়ে রাম স্ত্রীকে উদ্ধার করতে লংকা অভিযান করেন। শুক্লা দশমীতেই তিনি রাবণকে বধ করেন। রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রামের এই জয়লাভকে চিহ্নিত করা হয় বিজয়া দশমী নামে।
Durga Puja, major festival of Hinduism traditionally held for 10 days in the month of Ashvine (September-October), the seventh month of the Hindu calendar, and perticularly celebrated in Bengel, Assam, and other esstem Indien states.
9083522429 (Gopal Bidya Bhusan) 7407205958 (Kalyan Mahapatra) 9153376705 (Parash Dutta) 8617500160 (Debashis Das) 7384633781 (Arijit Das)
Aurobinda Nagar(South), Judge Court Rd. , P.S. Kotwali , P.O. Midnapore , Dist.- Paschim Medinipur, Pin - 721101, W.B. , India
aurobindanagardurgotsov@gmail.com
website by: Arijit Das ( Nitu) & Kamal Karmakar
© 2024 Created with sttechnology.in